কোষ্ঠকাঠিন্য: কারন, লক্ষন, চিকিৎসা ও পরামর্শ

কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, মল শুষ্ক ও শক্ত হয় এবং মলত্যাগে কষ্ট হয় তখন তাকে বাথরুম কষা বা কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
Admin
কোষ্ঠকাঠিন্য: কারন, লক্ষন, চিকিৎসা ও পরামর্শ

কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, মল শুষ্ক ও শক্ত হয় এবং মলত্যাগে কষ্ট হয় তখন তাকে বাথরুম কষা বা কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ও প্রকারভেদ

সাধারণভাবে কোষ্ঠকঠিন্য দুই প্রকার। যথা-

১) কোলোনিক কনস্টিপেশন ও

২) রেক্টাল কনস্টিপেশন

কোলোনিক কনস্টিপেশন (Colonic Constipation)

নিম্নলিখিত কারণে কোলোনিক কনস্টিপেশন হয়-

১। শাক-সবজী, ফলমুল না খাইলে, ভিটামিন বা হরমনের অভাব হইলে, খাওয়ার পরে পানি কম খাইলে কিংবা সময়মত আহার না করিলে।

২। অলসতা, বার্ধক্য, দুর্বলতা এবং রক্তহীনতার জন্যও এই রোগ হয়।

৩। পেটের মাংসপেশী দুর্বল হইলে, কিম্বা বিসমাথ, আফিম, লৌহ ইত্যাদি ঔষধের ক্রিয়ায় এই রোগ হয়।

৪। বৃহৎ অস্ত্রে সংকোচনের জন্য অর্থাৎ মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, অম্লশুল ব্যাধিতে আক্রান্ত হইলে এই রোগ হয়।

৫। পিত্তরস কম নিঃসরণ হইলে এই রোগ হয়।

রেক্টাল কনস্টিপেশন (Rectal Constipation)

নিম্নলিখিত কারণে রেক্টাল কনস্টিপেশন হয়-

১। পায়খানার বেগ হইলেও যথাসময়ে পায়খানা না করার অভ্যাস ক্রমাগত অনেক দিন স্থায়ী হইলে এই রোগ হয়।

২। মলাশয়ের নালীর শেষ প্রান্ত সরু হইলে।

৩। হিস্টিরিয়া এবং নিয়োর‍্যাসথেনিয়া রোগ থাকিলে এই রোগ হইতে পারে।

৪। পেটে টিউমার কিম্বা ইনটেসটিনে কোন রোগ থাকিলেও এই রোগ হয়।

৫। কৃমিজনিত কারণেও এই রোগ হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষন

১। তলপেটের বামদিকে ব্যথা হয়।

২। রোগীর পেট ফাঁপা কিম্বা ব্যথা থাকিতে পারে।

৩। শরীরে অস্বস্তি বোধ হয় এবং ক্ষুধা কমিয়া যায়।

৪। পেটে গ্যাস দেখা দিতে পারে এবং পেট ভার ভার বোধ হয়।

৫। মুখে দুর্গন্ধ বা অনিদ্রা থাকিতে পারে।

৬। দীর্ঘস্থায়ী কনস্টিপেশনের জন্য রোগী দুর্বল হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ ও চিকিৎসা

১. কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ Doralax ট্যাবলেট প্রতিদিন রাতে ১/২ টি ট্যাবলেট।

২. অথবা, Milk of Megneshia সিরাপ

৩. অথবা, Avolac সিরাপ

৪. অথবা, Easylife সিরাপ

৫. ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে Glycerin জাতীয় সাপোসিটার দিয়ে বাথরুম করাতে হবে, পরে কিছুদিন মুখে সেবনের ঔষধ খেতে হবে।

৫. অর্শ্ব বা পাইলস এর সমস্যা থাকলে অথবা অন্য কোন সমস্যা থাকলে সেইসবের চিকিৎসা করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করনীয়

আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ: প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান।

পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল পান করুন।

নিয়মিত শরীরচর্চা: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করলে অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

মলত্যাগের তাগিদ উপেক্ষা না করা: যখনই মলত্যাগের বেগ আসবে, তখনই টয়লেটে যান, মল আটকে রাখবেন না।

ইসবগুলের ভুসি ও অ্যালোভেরা: এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কনসটিপেশনের প্রকৃত কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করিতে হইবে, রক্তহীন হইলে রক্তশুন্যতার চিকিৎসা করিতে হইবে। নিম্নলিখিত নিয়ম পালন করিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

১। প্রত্যহ ভোরে মলত্যাগের অভ্যাস গড়িয়া তুলিতে হইবে। নিয়মমত সঠিক খাদ্য খাইতে হইবে।

২। অলসতা পরিহার করিয়া সকালে ও বিকালে পায়ে হাঁটিয়া ভ্রমণ করা, যথেষ্ট ব্যায়াম করা ইত্যাদি অভ্যাস গড়িয়া তুলিতে হইবে।

৩। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, টাটকা শাকসব্জী এবং ফলমূল খাওয়া অবশ্য কর্তব্য মনে করিতে হইবে।

৪। কৃমি থাকিলে ঔষধ খাওয়াইয়া কৃমি ফেলিয়া দিতে হইবে।

৫। এ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি, বহুমুত্র ইত্যাদি রোগ থাকিলে তাহার চিকিৎসা করিবে।

সতর্কতা! ইহা একটি নমুনা চিকিৎসা মাত্র, সকল প্রকার ঔষধের ডোজ (খাবারের নিয়ম) রোগির শরীরের গঠন, বয়স, ওজনে এবং রোগের অবস্থার ওপরে নির্ভর করে দেয়া হয়, তায় সেবনের পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Post a Comment