দাঁতে পোকা বা দাঁতের ক্ষয়: কারন, লক্ষন, চিকিৎসা ও পরামর্শ

দাঁতে পোকা বা দাঁতের ক্ষয়: কারন, লক্ষন, চিকিৎসা ও পরামর্শ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শুধুমাত্র Oshodherkotha.com ওয়েবসাইটে।
Admin
দাঁতে পোকা বা দাঁতের ক্ষয়: কারন, লক্ষন, চিকিৎসা ও পরামর্শ

দাঁতের ক্ষয় বা দন্তক্ষয় রোগ দাঁতের একটি জীবাণুজনিত রোগ। খাদ্য গ্রহণ করিয়া দাঁত পরিস্কার না করিলে দাঁতে খাদ্য লাগিয়া থাকে এবং ঐসব খাদ্য বস্তুর মধ্যে বিভিন্ন জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করে। ঐসব জীবাণুর মধ্যে এসিড প্রস্ততকারী জীবাণুগুলি তাহাদের সৃষ্ট এসিডের সাহায্যে দাঁতের এনামেল ও ডেন্টিনের ক্ষয় সাধন করে। এইভাবে জীবাণুজনিত কারণে দাঁতের গায়ে সৃষ্ট ক্ষত বা গর্তকে দাঁতের 'কেরিজ' বা 'দন্তক্ষয়' রোগ বলে।

এই রোগ সাধারণত প্রথম শুরু হয়। দাঁতের যেসব জায়গায় খাবার অতি সহজেই জমিয়া থাকে সেইখান থেকে। প্রথম দিকে আক্রান্ত ক্ষতটিকে এনামেলের উপর একটি কালো দাগের মত দেখা যায়। আস্তে আস্তে উহা একটি ছোট গর্তে পরিণত হয়। ঐ গর্তে অতি সহজেই খাবার ও জীবাণু জমিয়া থাকে এবং গর্তটি ক্রমান্বয়ে বড় হইতে থাকে। এইভাবে ক্ষতটি এনামেল হইয়া ডেন্টিনে প্রসারিত হয়। এই রোগ ডেন্টিনে প্রসারিত হইলে ঠান্ডা বা গরম পানি গ্রহণের সময় দাঁত শির শির করে। চিকিৎসা না হইলে ক্ষত ক্রমাম্বয়ে গভীর হইয়া ঘায়ে প্রসারিত হয় এবং উহাতে প্রদাহের সৃষ্টি করে।

দন্তক্ষয় (দাঁতের ক্ষয়) বা কেরিজ একটি জীবাণুজনিত রোগ। যে ধরনের জীবাণু এই রোগের সৃষ্টি করে তার মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) ও'ল্যাকটোবেসিলাস (Lacto Bacillus) নামক জীবাণুই প্রধান। সাধারণ কথায় এই রোগকে দাঁতের পোকা লাগাও বলা হয়।

সাধারণভাবে বলা যায় যে দাঁতের গায়ে জমে থাকা খাদ্যদ্রব্যের উপর অম্ল প্রস্ততকারী জীবাণু স্থানীয়ভাবে অম্ল সৃষ্টি করে যাহা দাঁতের ক্ষয়সাধন করে এবং দাঁতের গায়ে ক্ষয় বা গর্তের সৃষ্টি করে। এইটাই দন্তক্ষয় রোগ বা কেরিজ।

জীবাণু প্রলেপ, ডেন্টাল প্লাগ বা ব্যাকটেরিয়াল প্লাগ মুখে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের জীবাণু অবস্থান করে। আহারের পরে মুখ ও দাঁত ভালভাবে পরিস্কার না করিলে ঐসব জীবাণু দাঁতে লাগিয়া থাকা খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং এইভাবে লক্ষ লক্ষ জীবাণু জমে উঠে। এই ধরনের জীবাণু স্তরকে ব্যাকটেরিয়াল প্লাগ (Bacterial Plague) বলে। সহজ কথায় ভোরবেলায় যে আঠাল সাদা বস্তু মুখের মধ্যে পাওয়া যায়, ইঁহাই জীবাণু প্রলেপ। এই প্রলেপের শতকরা ৭০-৭৫ ভাগই বিভিন্ন আকার ও প্রকারের জীবাণু দ্বারা গঠিত এবং বাকি ২৫-৩০ ভাগের অধিকাংশই পচা খাদ্যবস্তু।

পরীক্ষা করিলে দেখা যায় প্রতি মিলিগ্রাম জীবাণু প্রলেপে ৪০ কোটিরও অধিক জীবাণু অবস্থান করে। খাদ্য কণা ভালভাবে কুলকুচা করিলেই ধুইয়া যাইবে। কিন্তু, ডেন্টাল প্লাগ জীবাণু প্রলেপ আঠালো বলে কেবল ব্রাশ ব্যবহার করলেই দূরীভূত হইতে পারে। দন্তশাস্ত্রে দাঁতের দুইটি প্রধান সমস্যা দন্তক্ষয় (দাঁতের ক্ষয়) ও মাড়ি সংক্রান্ত রোগ নিয়া আলোচনা করে। এই দুইটি রোগের সৃষ্টিতেই জীবাণু প্রলেপের ধ্বংসকারী ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুখ ও দাঁত থেকে ইহা দূরে রাখিতে পারিলেই বহু মূল্যবান দাঁত বাঁচিয়া যাইত এবং বহু মানুষ যন্ত্রণা থেকে নিস্কৃতি পাইত। দাঁতক্ষয় রোগে জীবাণু প্রলেপটি অন্যান্য উপাদানের ভূমিকা কেরিজ এর সৃষ্টি করে তাহার ব্যাপারে বুঝা ও বুঝানো অত্যন্ত জটিল। সাধারণভাবে বলা যায় যে, জীবাণু প্রলেপে বিদ্যমান জীবাণুগুলির মধ্যে এসিড তৈরী করিতে সক্ষম। জীবাণু প্রলেপের বাকি দাঁতের গায়ে লাগিয়া থাকা খাদ্যকণাকে এক জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে স্থানীয়ভাবে এসিডের সৃষ্টি করে। ঐ এসিড (Acid) দাঁতের এনামেলে অজৈব পদার্থগুলিকে ভেঙ্গে দেয়। তদুপরি জীবাণু নিঃসৃত কতিপয় প্রোটিন বা আমিষ দাঁতের জৈব বস্তুর ক্ষয়সাধন করে।

জৈব ও অজৈব দন্ত বস্তুর ক্ষয় প্রাপ্তির ফলে দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এইভাবে ক্ষয় প্রক্রিয়া এনামেল থেকে ডেন্টিনে এবং কালক্রমে দন্তশ্বাস বা ঘায়ে প্রসারিত হয়। কোন কোন লোকের দাঁতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকিতে পারে।

উপরে বর্ণিত আলোচনায় দেখা যায় যে দন্তক্ষয় রোগ সৃষ্টিতে নিম্নলিখিত ৩ টি উপাদানের মিলিত সংযোগ ও প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। 

  1. জীবাণু প্রলেপ
  2. খাদ্যের উপস্থিতি
  3. দওবস্তুঃ দন্তক্ষয় রোগ প্রতিরোধে অক্ষম দন্তবস্তু

ঢিনি জাতীয় খাদ্যকে দন্তক্ষয় রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাছাড়া, উপরের উল্লেখিত তিনটি উপাদানের মিলিত ক্রিয়ার সময়কাল দন্তক্ষয় রোগ সৃষ্টি বা বিস্তারের একটি পূর্বশর্ত।

দাঁতের উপর জীবাণু ও খাদ্যবস্তুর অবস্থান স্বল্পকালীন হইলে দন্তক্ষয় রোগ হইতে পারে না। এজন্য আহারের পরেই দাঁত পরিস্কার করা একান্ত প্রয়োজন। যাহারা দন্তক্ষয় রোগ বা কেরিজ (caris) রোগে আক্রাও হইয়াছে এবং দীতের এনামেলে কাল দাগ পড়ে ছোট গর্তে পরিণত হইয়াছে তাহারা অতি তাড়াতাড়ি যে কোন ডেন্টাল ক্লিনিকে গিয়া দাঁতের চিকিৎসক দ্বারা পরামর্শ নিয়ে দাঁতের এনামেলের কালদাগ ও গর্তকে ভাল করে পরিস্কার -  ফিলিং (Filling) করে বা গর্তপূরণ করে নেওয়া উচিত।

দাঁতে পোকা বা দাঁতের ক্ষয় রোগের ঔষধ

  1. দন্ত চিকিৎসকের সাহায্যে দাঁতের মধ্যে সৃষ্ট গর্ত যত তাড়াতাড়ি পারা যায় Filling (ফিলিং) করিয়া লইতে হইবে।
  2. যদি দাঁতের অবস্থা খারাপ হয় কিম্বা বার বার আক্রান্ত হওয়ায় দাঁতের গোড়া দুর্বল হয় তবে দন্ত চিকিৎসকের সাহায্যে দাঁত তুলে ফেলাই উত্তম।
  3. প্রাথমিকভাবে ব্যথার জন্য Aceclofenac জাতীয় ঔষধ - Flexi, Reservix, Vextin, Avenac, Ternila ইত্যাদি।
  4. অথবা, Diclofenac জাতীয় ঔষধ - Clofenac  Diclofen, Voltalin D ইত্যাদি।
  5. অথবা, Etoricoxib জাতীয় ঔষধ - Etorix, Tory ইত্যাদি।
  6. সাথে গ্যাসের ঔষধ - Seclo, Sergel, Mexpro, ইত্যাদি।
সতর্কতা! ইহা একটি নমুনা চিকিৎসা মাত্র, সকল প্রকার ঔষধের ডোজ (খাবারের নিয়ম) রোগির শরীরের গঠন, বয়স, ওজনের ওপরে নির্ভর করে দেয়া হয়, তায় সেবনের পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Post a Comment