![]() |
সিফিলিস একটি সংক্রামক রোগ যা রোগজীবাণু দ্বারা সৃষ্ট Treponema প্যালিডিয়াম. এই যৌনবাহিত রোগ (STD) যোনি, পায়ুপথ বা ওরাল সেক্সের সময় সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সিফিলিস নারী পুরুষ উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হইতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ একজনের দেহ হইতে অন্য একজনের দেহে সংক্রামিত হইয়া থাকে। তবে রোগীর বয়স বেশী হইলে সংক্রামিত হইবার সম্ভাবনা কম।
সাধারণত যৌন মিলনের সময় ঘর্ষণের কারণে সামান্যতম স্থান ছিলিয়া গেলে ঐ স্থানে সিফিলিজ জীবাণু কর্তৃক আক্রান্ত হইতে পারে। সিফিলিজ রোগে আক্রান্ত স্ত্রীলোক গর্ভধারণ করিলে সন্তানের দেহে এই রোগ জীবাণু সংক্রামিত হয়। এমন পর্যায়ে গর্ভপাত পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমনি ভাবে ২/১ বার গর্ভপাত হলেও পরবর্তীকালে রুগা শিশু জন্ম নিতে পারে।
এই রোগে আক্রান্ত শিশুর শরীরে বিভিন্ন রকমের ঘা থাকে, কানে কম শুনতে পায়, চোখে কম দেখতে পারে ইত্যাদি তাহার শরীরে রোগ স্থায়ী হইয়া থাকে।
উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, সিফলিস দুই প্রকার। একটি জন্মগত ও অন্যটি নিজকৃত।
সিফিলিসের লক্ষণ ও পর্যায়
এই রোগটি তিনটি পর্যায়ে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, যথা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং তৃতীয়। সিফিলিসের লক্ষণ এবং উপসর্গ অসুস্থতার পর্যায়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
- সিফিলিসের প্রাথমিক পর্যায়: সহবাস করার পর ২/৩ মাস সময়ের মধ্যে এই রোগের প্রকাশ ঘটে। পুরুষাঙ্গে বা স্ত্রী-অঙ্গে লাল রংয়ের শক্ত গোটা হয় তবে, কোন ব্যথা থাকে না, কিন্তু কাপড়ের ঘর্ষণে গোটার চামড়া উঠে ঘা হয় এবং পরে ঘা হতে রস বের হয়। ক্ষত স্থানটি শক্ত বলিয়া মনে হয়। ২/৩ মাসের মধ্যে উহা ভাল হইলে ঐস্থানে একটি দাগ থাকে। ইহা শরীরের অন্যান্য স্থানেও হইতে পারে। কখনও স্তনের মাথায়, ঠোঁটে, গলায় কিংবা মলদ্বারে হয়। এই ক্ষতে রোগ জীবাণু ভর্তি থাকে।
- সিফিলিসের দ্বিতীয় পর্যায়: ঘা হইবার পরে ২/৬ মাসের মধ্যে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি প্রকাশ পাইলে উহাকে দ্বিতীয় পর্যায় ধরা হয়। যেমন;— চামড়ায় গোল জাতীয় গোটা হইতে পারে। গুটাগুলি শক্ত হইতে পারে এবং পাকিয়া পুঁজের সৃষ্টি করিতে পারে। অনিয়মিত মৃদু জ্বর হইতে পারে। সর্দি-কাশি হয়। গলা ভাঙ্গা। সাধারণত এই পর্যায়ে লিস্ফগ্রাণ্ড, গলা, চোখের আইরিশ প্রভৃতি স্থানে রোগের আক্রমণ হয়। আবার শরীরের ভিজা স্থানে যেমন, স্ত্রীলোকের যোনীদ্বারের প্রবেশ পথে, মলদ্বারে প্রভৃতি স্থানেও হয়। ইহাতে স্থানীয় চামড়া ফুলিয়া যায়।
- সিফিলিসের তৃতীয় পর্যায়: রোগ সংক্রামিত হইবার তিন হইতে দশ বৎসরের মধ্যে ইহার লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং রোগীর জীবদ্দশা পর্যন্ত ইহা চলিতে পারে। এই অবস্থায় রোগ জীবাণু রক্তবাহী শিরায় প্রদাহের সৃষ্টি করিয়া শিরার ভিতরের ছিদ্র আরও সরু করিয়া ফেলে। ফলে শিরার ভিতরের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল কমিয়া গেলে ঐ স্থান পঁচিয়া যায়। ইহাকে গামা বলে। চামড়ার নীচে যে সকল স্থানে গামা হয়, তাহা হইল মুখমণ্ডল, হাঁটুর নীচ অংশ প্রভৃতি স্থান।
সিফিলিসের চিকিৎসার জন্য ঔষধ
- এন্টিবায়াোটিক ইনজেকশন - Ceftriaxone জাতীয় ইনজেকশন।
- সেইসাথে মাল্টি-ভিটামিন - Multivit plus ইত্যাদি।
- গ্যাসের ঔষধ - Omeprazol, Esomiprazol ইত্যাদি জাতীয় ঔষধ।
সিফিলিস হলে করনীয়
- সিফিলিস রোগ থাকা অবস্থায়, যৌন মিলন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখিতে হবে, যাতে রোগের প্রসারের বিদ্ধি না ঘটায়।
- নারী-পুরুষ উভয়েরই চিকিৎসা করিতে হইবে।
- রাত জাগান ও নেশা পান করা, অনিয়ম বন্ধ করা রোগীর জন্য মঙ্গলজনক।
- গায়ে জ্বর থাকিলে, Paracetamol জাতীয় ঔষধ।
- টক, মাংস, বেশী মসল্লা জাতীয় খবার, মাংস বা তৈলাক্ত খাবার না খাওয়া ভাল।
- রোগীর কাপড়-চোপড় নিয়মিত এন্টিসেপটিক (Detol বা, Sevlone) দিয়ে ধুইতে হইবে।