![]() |
গনোরিয়া সাধারণত একটি যৌনবাহিত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। গণোরিয়া এক ধরনের মহামারী জাতীয় রোগ। ইহা পুরুষ নারী উভয়েরই হয়ে থাকে। গনোকক্কাস নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এই রোগ হয়ে থাকে। যদি কোন স্বামী বা স্ত্রী যেকোন একজা গণোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে, সঙ্গম (সহবাস) করিলে সঙ্গমকারী ব্যক্তির এই রোগ হতে পারে। পুরুষ হইতে নারী কিংবা নারী হইতে পুরুষের দেহে সংক্রামিত হয়।
তাছাড়া যৌন মিলনের ফলে এই সকল রোগ হয় বলে এই রোগগুলিকে যৌনব্যাধি বলে। আবার অনেকে মেহ, প্রমেহ বা ধাতুপীড়া বলে থাকে।
গনোরিয়া রোগ জীবাণু শরীরে অন্য কোনও স্থানের মিউকাস মেমব্রেনে লাগিত্রে সেই স্থানও আক্রান্ত হইতে পারে। এই রোগে মূত্রথলি, জরায়ু, গর্ভাশয়, পুরুষাঙ্গ, শুক্রথলি ইত্যাদি বিভিন্ন স্থান আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে জীবাণু রক্তে ঢুকিয়া শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। মেয়েদের যৌন স্থান হইতে পুঁজ মলদ্বারে গড়াইয়া প্রদাহ হওয়ার নাম গণোকক্কাস প্রোফাটাইসিস। ইহা বংশ পরস্পরা সংক্রমিত হয় না, তবে গণোরিয়ায় আক্রান্ত মায়ের পেট থেকে সন্তান হইবার সময় ইহার পুঁজ সন্তানের চোখে লাগিয়ে শিশুর ঐ চোখ অন্ধ হইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করিয়া ২-১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পাইতে পারে।
গনোরিয়া রোগের কারন
গণোরিয়া রোগের কারণ: জীবাণুগুলি কক্কাস জাতীয় এক প্রকার জীবাণু। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ইহারা ডটের মত দেখায়। ইহারা জোড়ায় জোড়ায় একত্রে থাকে বলিয়া ইহাদিগকে ডিপলোকক্কাস বলে। গণোকক্কাস নামক এক ধরনের ডিপলোকক্কাস থেকেই গণোরিয়া রোগের সৃষ্টি হয়।
এই জাতীয় জীবাণুগুলি যদি পুরুষ বা নারীর দেহে অবস্থান করে, তবে তাহাদের যৌন মিলনের সময় একজনের দেহ হইতে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হইয়া থাকে। সাধারণত পুরুষ অথবা, নারীর দেহে এই জীবাণু ক্ষতের সৃষ্টি করিয়া থাকে। এই ক্ষতে পুঁজ সৃষ্টি হইয়া পুঁজ যদি কোন রকমে পুরুষ বা নারীর যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে তবে ইহারা তাহাদের যৌন অঙ্গে প্রবেশ করিয়া সেখানে বাসা বাঁধে এবং ক্ষতের সৃষ্টি করে। এমনি ভাবে একজনের দেহ হইতে আরেকজনের দেহে রোগ সংক্রমিত হয়।
গনোরিয়া রোগ নির্ণয়
- প্রস্রাব পরীক্ষা R/M/E করিতে হইবে।
- রক্তের V.D.R.L পরীক্ষা করিয়া রোগ নির্ণয় করিতে হইবে।
গনোরিয়া রোগের লক্ষণ
- পুরুষাঙ্গের মাথা চুলকায় এবং ঐ স্থানে আঠাল পদার্থ দেখা দেয়।
- স্ত্রীলোকদের জরায়ুতে বা প্রস্রাব নালীতে প্রদাহ হয়। মূত্রনালী হইতে পুঁজ পড়ে।
- প্রস্রাবের সময় জ্বালা-যন্ত্রণা হয় ও প্রস্রাবের সহিত পুঁজ পড়ে।
- জ্বর জ্বর ভাব হয়।
- বার বার প্রস্রাবের চাপ হয় এবং অল্প প্রস্রাব হয়।
- সাদা, হলদে প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পুঁজ পড়ে।
- চোখ, রেকটাম, মলদ্বার ইত্যাদি সংক্রামিত হইতে পারে।
রোগের চিকিৎসা?
- এন্টিবায়োটিক Cefuroxime জাতীয় ঔষধ - Cefotil ইত্যাদি।
- অথবা, Ceftriaxone ইনজেকশন - Ceftron, Trizon, ইত্যাদি।
- ব্যথা হলে - Diclofenac Sodium জাতীয় ঔষধ।
- ভিটামিন সি জাতীয় ঔষধ - Ceevit ইত্যাদি।
- অস্বস্তি অস্বস্তি লাগলে মানসিক প্রশান্তিদায়ক ঔষধ - Triptin, Lonapam ইত্যাদি।
উপদেশ
- গণোরিয়া হইয়াছে কিনা তাহা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হইতে হইবে।
- নিয়মিত যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করিয়া Viodin 10% এর সাথে পানি মিশাইয়া ক্ষত স্থান ধৌত করিতে হইবে।
- এই রোগ চলাকালে যৌন মিলন বন্ধ রাখিতে হইবে।
- রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে।
- মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করিতে হইবে।
- জ্বর থাকিলে দুধ, হরলিক্স, মিছরির সরবত, লেবুর রস খাওয়া ভাল।
- ঔষধ ছেড়ে প্রচুর ছোট মাছের ঝোল ভাত খাইবে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
- কাপড় চোপড় Antiseptic ঔষধ দিয়ে ধুইয়া ফেলিতে হইবে।